নিজস্ব প্রতিবেদক. ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার শোল্লা ইউনিয়নে শ্রী পঞ্চমী ও সরস্বতী পূজা উপলক্ষে গরুর কাঁছি ছেঁড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার শ্রী পঞ্চমী ও সরস্বতী পূজা উপলক্ষে শোল্লা মিলেনিয়াম বয়েজ ক্লাব গরুর কাঁছি ছেঁড়ার প্রতিযোগিতা ও তিনদিন ব্যাপী বৈঠকী গান, বিচার গান ও লালন গীতির আয়োজন করা হয়।
এছাড়াও উপজেলার বিলপল্লী যুব সংঘ ও চুড়াইন সাংস্কৃতিক সংঘের উদ্যোগে একই দিন এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
শোল্লা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ প্রাঙ্গনে। হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী এই খেলা দেখতে ভিড় করে ছিলেন প্রায় ১০/১৫ হাজার মানুষ। শোল্লা মিলেনিয়াম বয়েজ ক্লাবের সভাপতি বাবু নিখিল চন্দ্র মন্ডলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহŸায়ক ও শোল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ভূঁইয়া কিসমত।
গরুর কাঁছি ছেঁড়া অনুষ্ঠানে বিকাল ৩টার পর থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণের জন্য গরু আসতে থাকে শোল্লা উচ্চ দ্যিালয়ের মাঠে। বিশাল মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে উৎসুক জনতার ভিড়ে। নবাবগঞ্জ উপজেলা ছাড়াও লোকজন আসে দোহার, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর, সিংগাইর উপজেলা থেকে।
এ উপলক্ষে মাঠের চারপাশে বসে গ্রামীণ মেলা। মেলায় বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার ও শিশুদের খেলনার পসরা সাজিয়ে থাকেন দোকানিরা। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সের শৌখিন লোকজন কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পরেন। বিকিকিনিতেও ধুম পরে এদিন। তবে গরুর কাঁছি ছেঁড়ার ম‚ল প্রতিযোগিতা শুরু হয় বিকাল ৪টার দিকে।
শোল্লা মিলেনিয়াম বয়েজ ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রায়হান আহম্মেদ বলেন, অনুষ্ঠানটি আমাকে মুগ্ধ করে। এখানে সব বয়সের হাজার হাজার নারী-পুরুষ এসে আনন্দ উপভোগ করছেন। আমাদের যুবসমাজ বর্তমানে মাদকের ভয়াল ছোবলের শিকার। আমি মনে করি, গ্রামবাংলার এ ঐতিহ্যবাহী খেলা প্রতিটি উপজেলায় আয়োজন করা উচিত, যাতে যুবসমাজ লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলায় মনোনিবেশ করে মাদকের ভয়াল থাবা থেকে মুক্ত হতে পারে।’
এবারের আয়োজনে ছোট-বড় মিলিয়ে ২০টি গরু আসে বিভিন্ন এলাকা থেকে। এদের অধিকাংশ গরু ছিল বড় আকৃতির। গরুকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য গলায় মালা এবং গায়ে রঙ মাখিয়ে নিয়ে আসে। কাঁছি ছেঁড়া প্রতিযোগিতা শুরু থেকে একই নিয়মে চলে আসছে এখানে। মাঠের মাঝখানে একটি শক্ত খুঁটি গাঁড়া হয়। খুঁটির সঙ্গে গরুর গলার দুই প্রান্তে কাছি দিয়ে ভালোভাবে বেঁধে দেওয়া হয়।
এরপর আয়োজক ও গরুর মালিকপক্ষের লোকজন আতশবাজি ও ঢোল-তবলা বাজিয়ে গরুকে উত্তেজিত করতে পিছন থেকে হৈচৈ করে ধাওয়া দিলে গরু দৌড় দিয়ে গলার কাছি ছিড়ে ফেলে। যে গরু মোটা কাঁছি ছিঁড়তে পারবে সেই গরুর মালিককে সম্মানিত করা হয়। আর যদি কোনো গরু কাঁছি ছিঁড়তে না পারে তবে সেই গরু প্রতিযোগিতায় হেরে যায়।
গরু কাঁছি অনুষ্ঠানে প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মধ্যে প্রথম পুরস্কার টেলিভিশন ও প্রজায়ক্রমে দশটি মোবাইল সেট পুরষ্কার দেওয়া হয়।