কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি পরকীয়ার জেরে আপন ছেলেকে হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত দীর্ঘদিন পলাতক আসামি মা খুকি বেগমকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১০।
র্যাব-১০ এর সহকারি পরিচালক আমিনুল ইসলাম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে র্যাব-১০ ও র্যাব-১১ এর যৌথ আভিযানিক দল ফরিদপুর জেলার বৈঠাখালী এলাকায় একটি যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। উক্ত অভিযানে চাঁদপুর জেলার হাইমচর থানার মামলা নং-০৫ তারিখ-১৯/১১/২০১৫ খ্রিঃ, ধারা-৩০২/২০১/৩৪ দন্ড বিধি চাঞ্চল্যকর পরকীয়ার জেরে আপন ছেলেকে হত্যা মামলায় বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত দীর্ঘদিন পলাতক প্রধান আসামী মা খুকি বেগম (৫০)কে গ্রেফতার করে। খুকি বেগমের পিতার নাম নাম আনোয়ার উল্ল্যাহ ভূঁইয়া। বাড়ি চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলার দক্ষিণ আলগী গ্রামে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, আসামী খুকি বেগম(৫০) এর সাথে পার্শ্ববর্তী এলাকার জয়নাল গাজী নামক এক ব্যক্তির পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিষয়টি খুকি বেগমের ছেলে আরিফ হোসেন জানতে পারে এবং এ নিয়ে মা ও ছেলের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়। ২০১৫ সালের শুরুতে ছেলে আরিফ হোসেন পার্শ্ববর্তী এলাকার আব্দুস সালাম মিজির মেয়ে আসমা আক্তারকে (১৯)’কে বিয়ে করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তাদের বিয়ে মা খুকি বেগম প্রথমে মেনে না নিলেও এক পর্যায়ে মেনে নেন। তার কিছুদিন পর থেকে আরিফ হোসনে ও তার বউয়ের সাথে আরিফের মা খুকি বেগমের বিভিন্ন বিষয়ে নিয়ে ঝগড়াবিবাদ হয়। এরই মধ্যে মা খুকি বেগম ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৬/১১/২০১৫ তারিখে খুকি বেগম তার ছেলের বউ আসমা বেগমকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
অতঃপর গত ১৮/১১/২০১৫ তারিখে রাতে খুকি বেগম পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তার নিজ গৃহে ছেলে আরিফকে গরুর দুধের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়। আরিফ দুধ খেয়ে অচেতন হয়ে পরলে আরিফের মা খুকি বেগম ও তার পরকীয়া প্রেমিকসহ অজ্ঞাতনামা আরো ১/২ জনের সহযোগীতায় ছেলে আরিফকে ঘুমন্ত অবস্থায় হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে, বটি ও ব্লেড দিয়ে মারাত্মকভাবে রক্তাক্ত জখম করে। পরদিন ১৯/১১/২০১৫ তারিখে সকালে খুকি বেগম আরিফের স্ত্রী আসমাকে ফোন করে জানান যে ডাকাতরা আরিফকে মেরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে ফেলে গেছে। আরিফের স্ত্রী আসমা তাৎক্ষণিক স্বামীর বাড়িতে চলে আসেন এবং আরিফকে উদ্ধার করে প্রথমে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে ঢাকা নেওয়ার পথে মতলব ফেরিঘাট পার হওয়ার সময় আরিফ মৃত্যুবরণ করে। এ ঘটনায় ওই দিন ১৯/১১/২০১৫ তারিখে মৃত আরিফের স্ত্রী আসমা শাশুড়ি খুকি বেগমসহ অজ্ঞানামা ২/৩ জন ব্যক্তিদের আসামী করে হাইমচর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
এরপর থেকে আসামী খুকি আত্মগোপনে চলে যায় ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় নাম পরিচয় গোপণ করে থাকে। ফরিদপুরেও উক্ত আসামী নাম পরিচয় গোপণ করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে ধুলো দিয়ে বসবাস করতে থাকে। উক্ত মামলার ছায়া তদন্দের এক পর্যায়ে উক্ত আসামীর অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারে র্যাব ১০ ও র্যাব ১১ এর যৌথ প্রচেষ্টায় আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারকৃত আসামিকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।