নিজস্ব প্রতিনিধি.
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সংসদীয় আসনগুলো ২০০১ সালের সীমানায় ফিরেছে। এর ফলে কয়েকটি জেলার আসন বাড়ছে এবং কয়েকটি জেলায় কমছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় আসন নির্দিষ্ট করা হবে; এর সংখ্যা সর্বোচ্চ ১০টি হতে পারে। বাড়তে পারে ঢাকা জেলায় ন্যূনতম একটি আসন।
সূত্রমতে, সাতক্ষীরা, বরগুনা, সিরাজগঞ্জ ও কুমিল্লা জেলায় আসন বাড়তে পারে। কমতে পারে ঢাকা মহানগরী, গাজীপুর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম জেলায়। আসন অপরিবর্তিত থাকতে পারে ফরিদপুর, বরিশাল, চাঁদপুর ও ময়মনসিংহে। আর ২০০১-এর আদলে ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ পৃথক দুটি আসন হতে পারে। এটা হলে একটি আসন বাড়বে ঢাকা জেলায়।
সূত্রমতে, সে সময়ের বিন্যাস হওয়া ওই আসনগুলোর ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো কী ছিল; বিন্যাসের যৌক্তিকতা কতটুকু ছিল এবং আদৌ প্রয়োজন ছিল কী না; কিংবা রাজনৈতিক ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল কী না- এসব নানা ভাবনা সামনে রেখে বর্তমানে কাজ করছে কেএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশন। আসনবিন্যাস নিয়ে সভা করছেন ইসির অতিরিক্ত সচিব এবং মনিটরিং করছেন কমিটির আহ্বায়ক নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম।
এদিকে, ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা বিন্যাসের লক্ষ্যে ইসিতে আসন পুনর্বিন্যাস চেয়ে জমা হচ্ছে অভিযোগের স্তূপ। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৬৩টি আসন থেকে অভিযোগ এসেছে কমিশনে। এখনও অনেক জেলা থেকে আবেদন করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
বর্তমান কমিশন বিতর্কিত এই ধারার বিকল্প পথ কী রয়েছে, তা খতিয়ে দেখছে। এর বিকল্প কিছু পেলে যতদূর সম্ভব ২০০১ সালের সীমানায় ফিরে যেতে পারবেন এমনটাই জানিয়েছেন ইসির একাধিক কর্মকর্তা।
অভিযোগ রয়েছে, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিশেষ সুবিধা দিতে সারা দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৩০টিতে ব্যাপক রদবদল হয়। অভিযোগ উঠেছিল, বিগত সেনাসমর্থিত ওই কমিশন বেছে বেছে বিএনপির আসনগুলো পুনর্বিন্যাস করে। সে সময়ে ঢাকায় আওয়ামী লীগকে বাড়তি সুবিধা দিতে কুমিল্লাসহ ১২ জেলার ১০টি সংসদীয় আসন কর্তন করেছিল কমিশন। ঢাকা জেলায় ১৩টি থেকে সংসদীয় আসন করা হয় ২০টি। যে ১২টি জেলা থেকে আসন কর্তন করা হয়, তার মধ্যে ১০টি জেলা ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির দখলে ছিল।
ইসির সূত্রমতে, যৌক্তিক উপায়ে সীমানা বিন্যাস হলে অনেক জেলার আসন বাড়তে পারে, কমতে পারে কিছু জেলার আসনও। ২০০১ সালের বিন্যস্ত আসনে ফিরতে বর্তমান কমিশন কাজ করছে বলে জানা গেছে।
২০০১ সাল পর্যন্ত ঢাকা জেলার আসন ছিল ১৩টি। ২০০৮ সালে সীমানা বিন্যাস করে সাতক্ষীরা, বরিশাল, ফরিদপুর, বরগুনা, ময়মনসিংহ এবং ঢাকা জেলার কয়েকটি একক সংসদীয় আসনকে (দোহার ও নবাবগঞ্জ আলাদা আসন ছিল) যুক্ত করে মোট ১৩ থেকে ২০টি আসনে পরিণত করা হয়। ঢাকার দোহার এবং নবাবগঞ্জকে আলাদা আসন করে ঢাকা মহানগরের আসন ১০টি করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে বলে ইসির সূত্র নিশ্চিত করেছে। এক্ষেত্রে গাজীপুরে বাড়ানো একটি আসনও কমানো হতে পারে। তবে এখনও সবকিছু পর্যালোচনার মধ্যে রয়েছে- এমনটাই জানিয়েছে কমিশন।
ঢাকা জেলার দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলাকে পূর্বের ন্যায় ২০০১ সালের আদলে স্বতন্ত্র আসন দাবিতে ইসিতে আবেদন করেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার একাধিক নাগরিক। সালাউদ্দিন মোল্লা নামে এক বাসিন্দা তাদের যাতায়াতের অসুবিধার কথা উল্লেখ করে আগের মতো ঢাকা-১ দোহার উপজেলাকে একক আসন করার দাবি জানিয়েছেন।
একইভাবে নবাবগঞ্জকে আগের মতো স্বতন্ত্র উপজেলা হিসেবে ঢাকা-২ আসন চেয়ে মো. হুমায়ুন কবীর গং আবেদন করেছেন। আবেদন জমা পড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, আমরা সীমানা পুনর্বিন্যাস করার জন্য এখনও কোনো বিজ্ঞপ্তি জারি করিনি। এরপরও এখন পর্যন্ত ৬৩টি বিভিন্ন আসন থেকে সংক্ষুব্ধরা আবেদন জানিয়েছেন। আমরা তাদের আবেদনগুলো শাখাকে কম্পাইল করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। এই আবেদনগুলোর বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেগুলোও সময় সময় পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
সূত্রঃ আমার দেশ।