দেওয়ান আবুল বাশার, মানিকগঞ্জ:
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের গাফিলতিতে বিল্লাল হোসেন নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ঠান্ডা ও বুকে ব্যথা নিয়ে গত বুধবার ভর্তি হওয়ার পর শুক্রবার বিকেলে তাকে ‘ও’ পজিটিভের বদলে ভুল করে ‘বি’ পজিটিভ রক্ত দেওয়া হয়। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিনি মারা যান। এই মর্মান্তিক ঘটনায় শোকাহত পরিবারের স্বজনেরা একটি কক্ষে চিকিৎসকদের আটকে রেখে বিক্ষোভ করেন।
এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৫সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। নিহত বিল্লাল (৭০) মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার খাগড়াকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে তাদের ভুল রক্ত দেয়া হয়। রক্ত আনার পর ডাক্তারের অনুমতি লাগবে বলে জানায় নার্সরা। পরে ডাক্তার রক্ত দেখে শরীরে পুশ করার অনুমতি দেয়। এরপর নার্সরা রোগীর শরীরে রক্ত সঞ্চালন করে। এরপর থেকেই রোগীর সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। রোগীর আত্মীয় তন্ময় দেওয়ান ভুল রক্ত দেয়া হচ্ছে বলে জানায়। এ সময় হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সদের অনেক ডাকাডাকি করলেও তারা চিকিৎসা দেয়নি।
নিহতের ছোট মেয়ে শাহনাজ কান্নায় ভেঙে পড়ে জানান, চিকিৎসকরা তার বাবার শরীরে রক্তের অভাবের কথা বললে তারা একজন ডোনারের মাধ্যমে রক্তের ব্যবস্থা করেন। রক্তটি হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে জমা রাখা হয়। এরপর যখন রক্তের প্রয়োজন হয়, তখন ব্লাড ব্যাংক থেকে ‘ও’ পজিটিভের বদলে ‘বি’ পজিটিভ রক্তের ব্যাগ তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
শাহনাজ আরও অভিযোগ করেন, তার বাবার রক্তের কাগজপত্র ব্লাড ব্যাংক এবং রোগীর কাছেই ছিল। নার্স কোনো প্রকার যাচাই না করেই সেই ভুল গ্রুপের রক্ত তার বাবার শরীরে প্রবেশ করান। শাহনাজ আরো জানান, এর আগেও ভালো চিকিৎসার কথা বললে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তখন সাফ জানিয়ে দেন এর চেয়ে বেশি সেবা তারা দিতে পারবেন না। শাহনাজ বলেন, আমি আমার বাবা হত্যার বিচার চাই। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক মো. ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, রোগীর শরীরে রক্ত কম থাকায় দুই ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন ছিল। রক্ত আনার পর ইন্টার্ন চিকিৎসক ডক্টর ঐশী সেই রক্ত রোগীর শরীরে পুশ করেন। তবে, ঘটনার সময় ডিউটি ডাক্তার নূরজাহান কোথায় ছিলেন, সে বিষয়ে তিনি অবগত নন। রোগী ও চিকিৎসকদের সম্মিলিত গাফিলতিতে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
এদিকে, ঘটনার সময়কার মেডিসিন বিভাগের ডিউটি ডাক্তার নুরজাহান ও ইন্টার্ন চিকিৎসক ঐশীকে হাসপাতালে খুঁজে না পাওয়ায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাক্তার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে তাদেরকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।